গ্রাম আদালত কি-গ্রাম আদালত আইন ২০০৬


গ্রাম আদালত কি ,গ্রাম আদালত হল বাংলাদেশ গ্রামীণ বিচার ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা স্থানীয় জনগণের ছোটখাটো বিরোধ  দ্রুত এবং  অল্প সময়ে কম খরচে, সমাধানের জন্য প্রতিষ্ঠিত। এটি মূলত ইউনিয়ন পরিষদ ভিত্তিক একটি আদালত, যা সাধারন মানুষের কাছে বিচার প্রাপ্তি সহজলভ্য করে তুলতে কাজ করে। কার্যকর এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। 

গ্রাম-আদালত-আইন

এই আদালতে স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের মাধ্যমে সম্প্রীতি বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে। জমি জমা নিয়ে বিরোধ সম্পত্তি সংক্রান্ত এবং ছোটখাটো ফৌজদারী অপরাধ দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে এটি গ্রামীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখে। বিচার প্রক্রিয়া অংশগ্রহণ সহজেই হয় এটি জনগণের কাছে একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে আমরা গ্রাম আদালত নামে জেনে থাকি।

পেজ সূচিপত্রঃ গ্রাম আদালত কি-গ্রাম আদালত আইন ২০০৬

গ্রাম আদালত কি?

  • গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ অনুযায়ী স্থায়ীভাবে কতিপয় ফৌজদারী ও দেওয়ানী বিরোধ সহজ ও দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গঠিত হয়। 
  • গ্রাম আদালত অনধিক ৩,০০,০০০/- তিন লক্ষ টাকা মূল্যমানের ফৌজদারী ও দেওয়ানী বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে। 

  • গ্রাম আদালতের কোন আইনজীবীর নিয়োগের  বিধান নেই। 

কেন আমরা গ্রাম আদালতে যাব? 

  • গ্রাম আদালতেই সব অল্প সময়ে স্বল্প খরচে, এবং অতি সহজে বিরোধ ও বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য আমরা গ্রাম আদালতে যাব। 
  • গ্রাম আদালতে প্রতিনিধি মনোনয়ন এর আবেদনকারী ও প্রতিবাদী সমান সুযোগ পাবে। 
  • গ্রাম আদালতে আবেদনকারী ও প্রতিবাদী পক্ষগণ নিজের কথা নিজে বলতে পারে। 
  • গ্রাম আদালতের কোন আইনজীবীর দরকার হয় না। 
  • গ্রাম আদালতে সমঝোতার ভিত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় এক বিরোধ থেকে অন্য বিরোধ সৃষ্টির সম্ভাবনা কমে থাকে, সেজন্য আমরা গ্রাম আদালতে যাব। 
  • গ্রাম আদালতের পক্ষদ্বয়ের  মধ্যে পুনঃস্হাপন চেষ্টা করা হয়। 
  • গ্রাম আদালতে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণ বিশেষ করে নারী প্রতিবন্ধী এবং ক্ষুদ্র নিগোষ্ঠী খুব সহজে সুযোগ পায়। 
আরো পড়ুনঃ গ্রাম আদালতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

গ্রাম আদালতের সুবিধাসমূহ


গ্রাম-আদালতের-সুবিধাসমূহ

গ্রাম আদালতে কি কি ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তি করা যেতে পারে? 

গ্রাম আদালতের দুই ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয় 

১. দেওয়ানী সংক্রান্ত

২. ফৌজদারী সংক্রান্ত 

দেওয়ানী সংক্রান্তঃ দেওয়ানী সংক্রান্ত মামলা আমরা অনেকে বুঝতে পারি না। এই জন্য দেওয়ানী সংক্রান্ত মামলা কোন গুলো চলুন জেনে নেয়া যাকঃ

  • কোন চুক্তি রশিদ বা অন্য কোন দলের মূল্যে তো আদায়ের জন্য মামলা 
  • পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্ত 
  • স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধনের সংক্রান্ত
  • অস্থাবর সম্পত্তি উদ্ধার বা তার মূল্য আদায় সংক্রান্ত
  • কোন অস্থাবর সম্পত্তি জবরদখল বা ক্ষতি করার জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় সংক্রান্ত। 
  • গবাদি পশু অনধিকার প্রবেশের কারণে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত।। 
  • কৃষি শ্রমিকদের পরিশোধযোগ্য মজুরি ও ক্ষতিপূরণ আদায়  সংক্রান্ত 
  •  স্ত্রী  কর্তক বকেয়া ও ভরণপোষণ আদায় ইত্যাদি। 

উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলো দেওনি সংক্রান্ত মামলা যা আমরা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে দায়ের করতে পারি। 

ফৌজদারী সংক্রান্ত মামলাঃ ফৌজদারী সংক্রান্ত মামলা কি আমরা অনেকেই জানিনা, আর এই মামলাগুলো কি কি সেই সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিচে দেওয়া হলঃ 

এছাড়াও গ্রাম আদালতের কর্তৃক বিচারযোগ্য ফৌজদারী মামলা সমূহ ধারা ৩-(১)

  • স্বেচ্ছায় মারাআঘাত- ৩২৩ 
  • ক্ষতিসাধন -৪২৬ 
  • অপরাধ মূলক অনাদিকার প্রবেশ -৪৪৭ 
  • চুরি -৩৭৯
  • দাঙ্গা-১৪৭
  • ঝগড়া বিবাদ-১৬০
  • কলহ বা মারামারি -১৬০
  • মূল্যবান সম্পত্তি আত্মসাৎ করা -৪০৩
  • অন্যায় নিয়ন্ত্রণ ও অন্যায়ের আটক -৩৪২
  • ভয়ভীতি দেখানো বা হুমকি দেওয়া -৫০৬
  • কোন নারীর শালীনতাকে অমর্যাদা বা অপমানের উদ্দেশ্যে কথা বলা, অঙ্গভঙ্গি করা বা অন্য কোন কাজ করা। -৫০৮
  • ১০ টাকা বা তদূর্ধ্ব  মূল্যের পশু হত্যার বা বিকলঙ্ক করে অনির্দিষ্ট সাধন- ৪২৮ 
  • প্রতারণা-৪১৭ 
  • বাস গৃহে ইত্যাদি চুরি-৩৮০
  • মাতাল ব্যক্তির প্রকাশ্য ও সদাচরণ-৫১০ 
  • কর্মচারী বা চাকর কর্তৃক মালিকের দখলভুক্ত সম্পত্তি চুরি-৩৮১ 
  • শাস্তি ভঙ্গের উদ্দেশ্যে অপমান-৫০৪ 
  • অন্যায় ভাবে বাধা গ্রস্থ করা ৩৪১ 
  • প্রচারণার ফলে ইচ্ছা পূর্ব আঘাত করা -৩৬৪ 
  • অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ -৪৪৭ 
  • বে আইনি সমাবেশ করা -১৪১

উপরের উল্লিখিত ফৌজদারী সংক্রান্ত মামলা যা আমরা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে মামলা দায়ের করতে পারি। এবং "অতি দ্রুত সময়ে স্বল্প খরচে" মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। 

গ্রাম আদালতে কোন বিরোধগুলো নিষ্পত্তি করতে পারে না? 

গ্রাম আদালতে আমরা কোন বিরোধ মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে পারে না, সেই সম্পর্কে অনেকের ধারণা নাই। সেই সম্পর্কে জানতে হলে আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন 

  • ধর্ষণ 
  • খুন 
  • ডাকাতি 
  • বহুবিবাহ 
  • তালাক 
  • অভিভাবকত্ব 
  • দেনমোহর 
  • দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরুদ্ধার 
  • যৌতুক 
  • নারী ও শিশু নির্যাতন 
  • কোন কোন ঘটনায় রক্তপাত ঘটে থাকলে
  • স্থাবর সম্পত্তির স্বত্বাধিকার সংক্রান্ত 
  • ৩,০০,০০০/-তিন লক্ষ টাকার অনাদিক মূল্যবান এর যে কোন বিরোধ। 

গ্রাম আদালতে কিভাবে আবেদন দাখিল করতে হবে?

গ্রাম আদালতে কিভাবে আবেদন দাখিল করতে হবে, গ্রাম আদালত কি-গ্রাম আদালত আইন সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। বিশেষ করে, যারা গ্রাম গঞ্জে বসবাস করে, তারা গ্রাম আদালত কি ,সে সম্পর্কে কোন ধারনা তাদের নেই। কিভাবে মামলার দায়ের করতে হয়, কত দিনের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হয়, কিভাবে ফরম পূরণ করতে হয়, গ্রাম আদালতে কোন কোন মামলা দায়ের করা যায়, গ্রাম আদালতে বিচারকার্যের ধারা আইন কি, সেই সম্পর্কে জনগণ ভালোভাবে জানেনা। চলুন জেনে নেওয়া যাক গ্রাম আদালতে কিভাবে আবেদন দাখিল করতে হয়ঃ 

গ্রাম-আদালতে-কিভাবে-আবেদন-দাখিল-করতে-হবে
  • আবেদনকারীকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। 
  • আবেদনকারীকে আবেদনপএ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর দাখিল করতে হবে  
  • আবেদনপত্র দাখিলের সময় ফৌজদারী মামলার জন্য ১০ টাকা এবং দেওয়ানী মামলার জন্য ২০ টাকায় ফিস দিতে হবে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে। 
  • ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে বিরোধ সংঘটিত হওয়ার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করতে হবে।
  • দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে বিরোধ সংঘটিত হওয়ায় ৬০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হবে;তবে সম্পত্তি বেদখল হওয়ার দিন থেকে ১ বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করা যাবে। 

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো আবেদনকারী ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতে আবেদন দাখিল করতে পারবেন। 

আরো পড়ুনঃ গ্রাম আদালতের কয় ধরনের বিচার নিষ্পত্তি করা হয় 

গ্রাম আদালতের কীভাবে গঠন করা হয়? 

একজন চেয়ারম্যান এবং উভয়পক্ষ (আবেদনকারী ও প্রতিবাদী কর্তৃক মনোনীত ২ জন করে মোট ৫ জন সদস্য নিয়ে গ্রাম আদালত গঠিত হবে। 

চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতে নির্ধারিত পদ্ধতীতে প্যানেল চেয়ারম্যান /ইউনিয়ন পরিষদের কোন সদস্য গ্রাম আদালতের দায়িত্ব পালন করবেন। 

নারীর সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রাম আদালতের প্যানেল সদস্য  হিসাবে নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক।  ধারা: ৫(১)।

গ্রাম-আদালত-আইন-২০২৪

গ্রাম আদালতে কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কত টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে?

গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কত টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে আপনি জানেন কি? চলুন জেনে নেয়া যাক:

  • মিথ্যা মামলার দায়ের করলে জরিমানা করা হয় 
  • সাক্ষী কর্তৃক সমান অমান্য করলে জরিমানা করা হয়। 
  • গ্রাম আদালতের অবমাননা করলে জরিমানা করা হয়। 

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো গ্রাম আদালতে জরিমানা করতে পারে। কিন্তু কত টাকা করতে পারে আপনি জানেন কি? 

মিথ্যা মামলার দায়ের করলেঃ গ্রাম আদালতে মিথ্যা মামলার দায়ের করা হলে, মিথ্যা মামলা দায়েরকারীকে অনধিক ৫,০০০/-টাকা জরিমানা করতে পারবে। 

সাক্ষী কর্তৃক সমান অমান্য করলেঃ গ্রাম আদালত কর্তৃক জারিকৃত সমন সাক্ষী ইচ্ছা করে অমান্য করলে, গ্রাম আদালত ঔ সমন অমান্যকারীকে সাক্ষীকে অনাদিক ১,০০০/- টাকা জরিমানা করতে পারবে। 

গ্রাম আদালত অবমাননা করলেঃ কোন ব্যক্তি যদি গ্রাম আদালত অবমাননা করে তাহলে গ্রাম আদালত অনধিক ১,০০০/- টাকা জরিমানা করতে পারে। 

নিম্নোক্ত  বিষয়গুলো গ্রাম আদালত অবমাননার সামিলঃ

  • গ্রাম আদালত সম্পর্কে অশালীন কথা বলা বা হুমকি দেওয়া। 
  • গ্রাম আদালতের কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা 
  • গ্রাম আদালতের আদেশ সত্ত্বেও কোন দলিল বা অর্পণ বা হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হওয়া 
  • আদালতের কাছে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করা 

গ্রাম আদালত কিভাবে গ্রামের জনগণকে সহায়তা করতে পারে? 

  • গ্রাম আদালত হলো স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ বা বিবাদ নিষ্পত্তির ব্যবস্থাপনা ন্যায্য বিচার লাভে সহায়তা করতে পারে। 
  • গ্রাম আদালতে সবাই অল্প সময় স্বল্প খরচে এবং অতি সহজে প্রতিকার পেয়ে থাকে। 
  • গ্রাম আদালতে আবেদনপত্র দাখিলের ফিস ছাড়াই অন্য কোন খরচ নেই 
  • গ্রাম আদালতে উচ্চতর আদালতের মামলার জট কমাতে সাহায্য করে। 

"কেন যাবো মোরা দূরের পথে

          চলো যাই গ্রাম আদালতে "


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টু ডে টিপস ব্লগে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url