পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে বা বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করবেন অথচ জানেন না বাংলাদেশের পাসপোর্ট করতে গেলে কি কি কাগজ লাগে? পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য আবশ্যক শুধু ভ্রমণের অনুমতি দেয় না বরং এটি দেশের বৈধ নাগরিক হিসেবে আপনাকে পরিচিত নিশ্চিত করবে। বর্তমানে জেনে নিন, নতুন ৫ বা ১০ বছর মেয়াদীই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে।
পাসপোর্ট করতে গিয়ে অনেকে প্রাথমিক ধাপ বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে বিভ্রান্তিতে পড়েন আজকের এই লেখায় আমি বিস্তারিত আলোচনা করব কি কি এবং কিভাবে প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করবেন। সেজন্য আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
পেজ সূচিপএঃ পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
- পাসপোর্ট এর ধরন সমূহ
- পোর্ট তৈরি করার ধাপসমূহ
- পাসপোর্টে করতে কি কি লাগে
- পাসপোর্ট এর কিছু সাধারণ সমস্যা ও সমাধান
- পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- শিশুদের পাসপোর্ট জন্য আবেদনের করার প্রয়োজনীয় কাগজপএ
- প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট করতে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপএ
- সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপএ
- আমাদের শেষ কথাঃ পাসপোর্টে করতে কি কি লাগে
পাসপোর্টে এর ধরন সমূহ
বাংলাদেশের সাধারণত দুটি ধরনের পাসপোর্ট তৈরি করা হয়ঃ
- নতুন পাসপোর্ট (Fresh passport) যারা প্রথমবার পাসপোর্ট তৈরি করেছেন।
- পুনরননীবকরণ (Renewal)যাদের পাসপোর্ট মে হয়েছে বা নতুন তথ্য সংযুক্ত করতে হবে।
এছাড়াও ই পাসপোর্ট এবং এমআরপি ( মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) ধরনের পাসপোর্ট বর্তমান প্রচলিত রয়েছে।
পাসপোর্ট তৈরি করার ধাপসমূহ
পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়া মূলত কয়েকটি ধাপে বিভক্ত
- ফরম পূরণ করা
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ
- ফি জমা দেওয়া
- বায়োমেট্রিক এবং সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা
পাসপোর্ট সংগ্রহ করা প্রতিটি ধাপের বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করছি।
পাসপোর্ট তৈরির ধাপসমূহঃ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ
আরো পড়ুনঃ মোবাইল ফোন দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং
উপরে উল্লেখিত কাগজপত্র গুলি সংগ্রহ করে নিশ্চিত করুন যে সব কিছু সঠিকভাবে পূরণ হয়েছে।
আবেদন ফরম পূরণঃ অনলাইন বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম ডাউনলোড করুন এবং নির্ভুলভাবে পূরণ করুন।
পাসপোর্ট ফি জমা দিনঃ আপনার আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হবে।
সাধারণ পাসপোর্ট এর জন্য ৩৪৫০ টাকা।
জরুরী পাসপোর্ট এর জন্য ৬৯০০ টাকা। ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফ্রি জমা দেওয়া যায়।
বায়োমেট্রিক এবং ছবি তোলাঃ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ফুলের ছাপ ছবি এবং স্বাক্ষর গ্রহ সংগ্রহ করা হবে।
কাগজপত্র যাচাইঃ পাসপোর্ট অফিসে আপনার জমা দেওয়া কাগজপত্র যাচাই করবে যদি কোন ভুল বা পাওয়া যায় তবে আপনাকে তার সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হবে।
পাসপোর্ট তৈরি এবং বিতরণঃ
সবকিছু ঠিক থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়ে যাবে। পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য আপনাকে মেসেজ পাঠানো হবে।
ই পাসপোর্ট বনাম এমআরপি পাসপোর্ট
ই পাসপোর্ট এর বৈশিষ্ট্যঃ
- এটি একটি চিপ যুক্ত পাসপোর্ট,যেখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এনক্রিপ্ট করা থাকে।
- আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং নিরাপত্তা অনেক বেশি।
- দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া।
এমআরপি পাসপোর্ট বৈশিষ্ট্যঃ
- এটি মেশিন রিডেবল,তবপ চিপ যুক্ত নয়
- নিরাপত্তা তুলনামূলক কম।
- ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার তুলনামূলক সময় সাপেক্ষে।
পাসপোর্ট করতে যেসব কাগজ প্রয়োজন হয়
জাতীয় পরিচয় পত্র (এন আই ডি কাড)ঃ
- আপনার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ১৮ বছর তার বেশি বয়সের জন্য পূর্ণাঙ্গ nid প্রয়োজন।
- ১৮ বছরের কম বয়সীর ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ গ্রহণযোগ্য।
- যদি আপনার এনআইডি কার্ড না থাকে তবে জন্ম নিবন্ধন সনদ অবশ্যই আপডেট হতে হবে।
ফটোকপি এবং আসল কাগজপত্রঃ
- এন আই ডি বা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি। পাসপোর্ট ফি জমার রশিদ।
ঠিকানা প্রমাণ পত্রঃ আপনার বর্তমান বা ইথানীও ঠিকানা প্রমাণ হিসেবে নিচে যেকোনো একটি প্রয়োজন।
- বিদ্যুৎ বিল
- গ্যাস বিল
- পৌর করের রশিদ
- হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ
- পাসপোর্ট সাইজের ছবিঃ যদি ই পাসপোর্ট ছবি তোলা হয় পাসপোর্ট অফিসে , তবুও আপনার ছবি অতিরিক্তর প্রয়োজন হতে পারে। ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- পিতা মাতার অভিভাবক তথ্যঃ ১৮ বছর কম বয়সীদের জন্য পিতা-মাতা বা আইনগত অভিভাবকদের তথ্য জমা দিতে হবে।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেঃ কিছু নির্দিষ্ট অবস্থায় যেমন যদি কোন অতিরিক্ত তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ ঐচ্ছিকঃ
- যদি আপনি উচ্চ শিক্ষিত হন এবং একই তথ্য ও অন্তর্ভুক্ত হতে চান।
পাসপোর্ট এর কিছু সাধারণ সমস্যা এবং সমাধান
- তথ্য ভুলঃ আবেদনপত্র তথ্য পাসপোর্ট পরীক্ষা এখন হতে পারে তাই আপনার আবেদন ফরমটি পূরণের সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকা আবশ্যক।
- বিলম্বঃ আপনি পাসপোর্ট তৈরি করতে দেরি করলে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন, বা অনলাইন স্ট্যাটাস চেক করুন।
- কাগজপত্রের অভাবঃ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কোনটিই না থাকে তবে তার দ্রুত সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করুন।
পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপসঃ
- পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য সব সময় নির্ভুল তথ্য দিন পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি।
- পাসপোর্ট সময়মতো ফ্রি জমা দিন এবং রশিদ সংগ্রহ করুন আপনার পাসপোর্টটি সচল থাকে।
- আবেদনপত্র পূরণের আগে ভালোভাবে নির্দেশিকা পড়ুন যাতে আপনার পাসপোর্ট তৈরি করতে কোন বাধা না হয়।
- পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য ফটোকপি এবং মূল কাগজপত্র সব সময় সঙ্গে রাখুন যাতে সঙ্গে সঙ্গে আপনি পাসপোর্ট এর জন্য সব প্রয়োজনের কাগজপত্র দিতে পারেন।
শিশুদের পাসপোর্ট জন্য আবেদনের করার প্রয়োজনীয় কাগজপএ
- শিশুদের জন্য পাসপোর্ট তৈরি করতে হলে অনেনলাইন নিবন্ধর সনদপত্র লাগবে
- গার্ডিয়ান হিসেবে মা বাবার ভোটের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি বাধ্যতামূলক লাগবে।
- শিশুদের পাসপোর্ট করতে হলে অবশ্যই অনলাইনে আবেদন ফরমে সারাংশ পত্র লাগবে
- পাসপোর্ট করার জন্য অনলাইনের আবেদন ফরমের কপি লাগবে
- এছাড়া আবেদন ফি ব্যাংক ড্রাফ্ট এর চালানোর কপি প্রয়োজন হবে
- এছাড়াও শিশুর টিকাকার প্রয়োজন ক্ষেত্রে লাগতে পারে
- থ্রি আর সাইজের ছবি লাগবে।
প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট করতে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপএ
- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা এন আই ডি (NID)কার্ডের কপি লাগবে।
- এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বা পৌরসভার বাসিন্দা হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র লাগবে
- আপনার বাড়ির বৈদ্যুতিক বিলের কাগজ লাগবে অনলাইনের আবেদন সারাংশ (summary) আকারে লাগবে।
- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আবেদন ফরম ব্যাংক ড্রাফ্ট এর চালানোর কপি লাগবে।
- যার পাসপোর্ট করবে ধনকারী যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকে তাহলে সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্টুডেন্ট কার্ডের প্রয়োজন হবে অথবা সার্টিফিকেট লাগতে পারে।
- মা-বাবার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি অপশনাল হিসেবে লাগতে পারে।
- আবেদনকারী যদি বিবাহিত হয়ে থাকে তাহলে বিবাহিত নিকাহনামা প্রয়োজন হবে।
সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপএ
- এনআইডি কার্ডের ফটোকপি লাগবে
- চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিক সনদপত্র
- অনলাইনের আবেদন ফরমের সারাংশ
- আবেদন করার জন্য ইউটিলিটি বিলের কাগজ।
- মা-বাবার এনআইডি কার্ড অপশনাল হিসেবে লাগবে
- যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে বিবাহিত হলে নিকাহনামা লাগবে।
- আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন সেই প্রতিষ্ঠানের NOC certificate লাগবে
- যদি সরকারি হয়ে থাকেন তাহলে সরকারি NOC সার্টিফিকেট লাগবে অথবা বেসরকারি হয়ে থাকলে বেসরকারি NOC লাগবে।
আমাদের শেষ কথাঃ পাসপোর্টে করতে কি কি লাগে
পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ এবং সঠিক নিয়ম অনুসরণ করলে প্রক্রিয়াটি সহজ এবং সময় মতো সম্পন্ন করা সম্ভব। আজকের প্রযুক্তি যুগে অনলাইনে এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে গেছে। তাই আগে প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র প্রস্তুতি রাখুন এবং নির্মূল ভাবে আবেদন পত্র পূরণ করুন।
আন্তর্জাতিক ভবনের জন্য পাসপোর্ট একটি অপরিহার্য নথি। তৈরি করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে রাখুন এবং নিজেই সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করুন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিয়ে নিয়ম মেনে কাজ করলে পাসপোর্ট তৈরি করতে কোন হবে না। তাছাড়া পাসপোর্ট চিকিৎসা, শিক্ষা, বা অন্যান্য কাজের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তাই সময় মত পাসপোর্ট করে নিন এবং আন্তর্জাতিক যাত্রার প্রস্তুতি শুরু করুন।
টু ডে টিপস ব্লগে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url